কমলা খাওয়ার ১৩টি উপকারিতা এবং অপকারিতা
কমলা খাওয়ার ১৩টি উপকারিতা সম্পর্কে জানব।কমলা খায় কিন্তু কমলার যে পুষ্টিগুণ রয়েছে সেই সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা।কমলা খেলে স্বাস্থ্যের অনেক উপকার হবে।আমরা যদি প্রতিদিন একটা করে কমলা খাই তাহলে কমলা লেবুর যে পুষ্টিগুণ রয়েছে তা প্রতিদিন পাব।
এতে করে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে স্বাস্থ্যকে রক্ষা করবে। চলুন তাহলে কি পরিমান কমলা খাব, কমলার পুষ্টিগুন এবং কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কমলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে জানব।
পেজ সূচিপত্রঃ কমলা খাওয়ার ১৩টি উপকারিতা এবং অপকারিতা
- কমলা খাওয়ার ১৩টি উপকারিতা সম্পর্কে
- কমলার রস খাওয়ার উপকারিতা
- কমলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে
- কমলার পুষ্টিগুণ ও উপাদান
- কারা কমলা খাওয়া থেকে বিরত থাকবে
- কমলা খাওয়ার নিয়ম
- FAQ: প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
- শেষ কথা কমলা খাওয়ার ১৩টি উপকারিতা এবং অপকারিতা
কমলা খাওয়ার ১৩টি উপকারিতা সম্পর্কে
কমলালেবু এটা অতি পরিচিত একটি জনপ্রিয় ফল। বাজারে গেলে ফল পাওয়া যায় এমনকি এখন
গ্রামে গ্রামে বিক্রি হচ্ছে। কমলালেবু হচ্ছে মৌসুমী ফল। শীতকালে বেশি পাওয়া
যায়। শীতকালে কমলা রপ্তানি বেশি হয়। এবং দামটা সহজলভ্য হয়। দাম কম বলে
মানুষ কিনে খেতে পারে।কিন্তু বর্তমানে সারা বছর এখন কমলালেবু পাওয়া যায়। তাই
তুলনামূলকভাবে দামটাও বেশি হয়। দাম বেশি হলো কমলার যে পুষ্টিকুণ গুলো রয়েছে
আমরা যদি একটা করে খেতে পারি তাহলে সে পুষ্টিগুণ গুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য
উপকার হবে।
বিশ্বজুড়ে কমলার ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। শুধু যে কমলালেবু খেলে আমাদের
স্বাস্থ্যের উপর দেয়া হয় তাও নয় কমলার খোসা আমাদের ত্বকের যত্নে অনেক
উপকার হয়। কিন্তু আমরা অনেকে কমরার খোসাটা ফেলে দিন। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখার
জন্য বা ত্বকের যত্ন কমলালেবু বা কমলা খোসা বিশেষ ভূমিকা রাখে। অনেকে মনে
করেন কমলা একটি স্বাস্থ্যকর ফল।
প্রতিদিন খাবারের তালিকায় যদি পুষ্টিকর ফল থাকে তাহলে স্বাস্থ্য নিয়ে
আমাদের চিন্তা করতে হবে না। তাই আপনি যদি প্রতিদিন খাবারের তালিকায় ভিটামিন ও
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধকর রাখতে চান তাহলে কমলা লেবু একটি অসাধারণ বিকল্প। এ ফলটি শুধু
ছাদে নয় স্বাস্থের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শীতকাল হোক বা গরমে
কমলালেবু সবার কাছে একটু জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফল। এখন নিচে আমরা জানবো কমলা
খাওয়ার ১৩টি উপকারিতা সম্পর্কে।
আরো পড়ুনঃ কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ১০টি উপকারিতা এবং অপকারিতা
- রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ বর্তমানে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর মানুষ অসুস্থর কারণ হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাবার। বর্তমানে সবকিছু ভেজাল ভাবেই তৈরি হচ্ছে যার কারণে মানুষ অসুস্থ বেশি হচ্ছে। কিন্তু কমলা তে থাকা ভিটামিন সি এর উচ্চ ঘনত্বের কারণে এটি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করে। কমলা তে থাকা ভিটামিন সি মানুষের শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।
- ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল করেঃ বর্তমানে মেয়েরা ত্বকের যত্নে দিক দিয়ে অনেক সচেতন। ত্বককে ভেতর থেকে ফর্সা ও উজ্জ্বল করার জন্য বাজারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করে। এতে করে অস্থায়ীভাবে ফর্সা হলেও স্কিনের সমস্যা হতে পারে। তাই আপনার স্কিন ভালো রাখার জন্য কমলা বা কমলার খোসা ত্বকের জন্য একটি প্রাকৃতিক স্কিন কেয়ার উপাদান। এতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি করে। ফলের ত্বক হয় নরম উজ্জ্বল ও দাগ হীন।
- হৃদরোগের ঝুকি কমায়ঃ যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকে, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তনালীতে চর্বি জমা হওয়া, ব্লাড সার্কুলেসন ঠিকমতো না হওয়া, অক্সিডেটিভ স্টেস ও ফ্রি র্যাডিক্যালস রয়েছে তাদের জন্য কমলালেবু খাওয়া অনেক উপকারী। কারণ আপনার শরীরে ধীরে ধীরে এ কারণগুলো হৃদপিন্ডের রক্ত চলাচলে বাধাগ্রস্থ করে। হলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তার কমলালেবু আমাদের জন্য একটু উপকারী ফল।
- ক্যান্সার প্রতিরোধঃ ক্যান্সার হলো এমন একটি রোগ যেখানে শরীরের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত বাড়তে থাকে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সাধারণ কোষ যখন পুরনো হয় তখন তা মারা যায় এবং নতুন কোষ তৈরি হয়। কিন্তু ক্যান্সারের কোষ মারা যায় না বরং অনিয়ন্ত্রণভাবে বাড়তে থাকে। এভাবে এই অস্বাভাবিক কোষ গুলো শরীরের গুটি বা টিউমার তৈরি হয়। কারণ এ ক্যান্সারের কোষ রক্তের মাধ্যমে শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে যেতে পারে। এটা মেটাস্টোসিস নামে পরিচিতি। একবার ছড়িয়ে পড়লে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।
- ক্যান্সারের কারণ সব সময় একও নাই, তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলো হলো ধূমপান ও তামাক, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও জাকফুট, রেডিয়েশন, কেমিক্যাল, কিছু ভাইরাস যেমন এইচপিভি, জেনেটিক বা পারিবারিক কারণ। তবে মনে রাখবেন সব কারণে ক্যান্সার হবে এ রকম নয় শুধু ঝুঁকি বাড়ায়। তবে এসব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের খাদ্যের তালিকায় পুষ্টিকর খাবার বা ফল রাখা উচিত। তার মধ্যে হচ্ছে কমলা লেবু। কমলায় থাকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, যেমন ফুসফুস, স্তন, পাকিস্থলী এবং ক্লোন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- চোখের দৃষ্টি ভালো রাখেঃ বর্তমানে মানুষ চোখের সমস্যায় ভুগছে। এখন অল্প বয়সে ছেলে বা মেয়েদের চশমা ব্যবহার করতে হচ্ছে। ঠিকভাবে চোখে দেখতে পাচ্ছে না। এসব সমস্যা আমাদের একদিনে হয় না। কিন্তু আমরা সেভাবে ছেলেকে গুরুত্ব দেই না। চোখের দৃষ্টি ভালো রাখার জন্য কমলা ফল হচ্ছে একটি উপকারী ফল। কমলা তে থাকা ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এবং কমলার ভিটামিন এ ও ক্যারোটিনয়েড চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করে এবং দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করেঃ ওজন এটা এখন বর্তমানে মানুষের বেশি সমস্যা। ওজন নিয়ন্ত্রণে অনেক মানুষ ডিপ্রেশনে থাকে। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যায়াম করার পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্যকর খাবার এবং পুষ্টিকর ফল খাওয়া উচিত। তার মধ্যে একটি হচ্ছে কমলালেবু। কমলাতে রয়েছে প্রাকৃতিক মিষ্টি সাদ এবং উচ্চ জলীয় উপাদান ওজন নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। কারণ কমলাতে ক্যালরি কম কিন্তু ফাইবার বেশি যা দীর্ঘক্ষণ খুদা কমিয়ে রাখে এবং অতিরক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য কমলা হতে পারে আপনার জন্য অসাধারণ একটি ফল।
- হজমশক্তি উন্নত করেঃ অনেকের আছে যাদের খাবার খাওয়ার পরে হজমের সমস্যা হয়। যার কারণে অনেক সময় পেট ফাঁপা যায়, বমি হয় বা অস্বস্তিকর লাগে। আবার অনেক সময় বদহজমও হয়। যাদের এই সমস্যা আছে তাদের জন্য কমলালেবু হচ্ছে একটি স্বাস্থ্যকর ফল। কমলা তে থাকা ফাইবার সমৃদ্ধ যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ আমাদের শরীরের হৃদপিন্ডের রক্তকে পাম্প করে পুরো শরীরে পাঠায়। রক্ত যখন রক্তনালীর ভেতর দিয়ে যায় তখন সে যে চাপ সৃষ্টি করে সেটাই রক্তচাপ। যখন মানবদেহে রক্তচাপ বেশি হয়ে যায় তখন রক্তনালীতে চাপ বেড়ে যায় যার ফলে হতে পারে হাটকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনি সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যারা এসব সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য কমলা উপকারী ফল। কারণ এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
- হাড় ও পেশি সুস্থ রাখেঃ কমলা তে থাকা ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের হাড় ও পেশি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এতে থাকা যে পুষ্টিগুণগুলো রয়েছে যার কারণে আমাদের স্বাস্থ্যের হাড় মজবুত করে, খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ বাড়ায়, পেশির ব্যথা, টান এবং দুর্বলতা কমায় কেবল পেশি ক্ষতি মেরামত করে। তাই প্রতিদিন পরিমাণ মতো কমলা খেলে হাড় শক্ত থাকে, পেসি সুস্থ থাকে এবং শরীর আরো সক্রিয় হয়।
- হাইড্রেশনঃ আমরা কমলার রস খাই। কিন্তু কমলার রস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী সে সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণাই নাই। কমলার রয়েছে প্রায় ৮৫% জল থাকে। যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
- শরীর থেকে টক্সিন দূর করেঃ আমাদের শরীরে বিষাক্ত একটা গ্যাস থাকে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতি করে। তবে কমলা খেলে এই বিষাক্ত গ্যাসটা বের হয়ে যাবে। কারণ কমলাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সাইট্রিক অ্যাসিড শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয় ফলের লিভার পরিষ্কার থাকে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করেঃ ডায়াবেটিস এটি একটি পরিচিত অসুখ। ছোট-বড় প্রায় সব ধরনের লোকের এই ডায়াবেটিস রোগ হয়। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরকে খাবার পরিমান মতন খেতে হয়। যাদের ডায়াবেটিস আছে আছে তারা যদি সীমিত পরিমানে কমলা খায় তাহলে রক্তের শর্করার ভারসাম্য বজায় থাকে। কারণ কম রাতে প্রাকৃতিক সুগার থাকলো খাইবার রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়িয়ে দেই না।
কমলার রস খাওয়ার উপকারিতা
আমরা প্রায় সকলেই কমলা খায়। কিন্তু কমলা খাওয়ার ১৩টি উপকারিতা আমাদের
স্বাস্থ্যের জন্য তেমনি কমলার রস খেলেও তার কম না। কমলার রস খেলেও আমরা আমাদের
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার পাব। কারণ অনেকে আছে যে কোন ফল রস করে খেতে পছন্দ
করে। আবার অনেকে মনে করে রস করলে ওর পুষ্টিগুন বা সাদ চলে যায়। কমলার রস শুধু
সুস্বাদু নয় এটি শরীরের জন্য অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি প্রাকৃতিক পানীয়।
সকলে খালি পেটে কমলা রস খেলে শরীরের শক্তি যোগায় এবং হজম প্রক্রিয়া আরো
ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। আর কি কি উপকার পাওয়া যায় তার নিচে আলোচনার
মাধ্যমে জেনে নিন।
- শরীরের দ্রুত শক্তি যোগায়। প্রাকৃতিক গ্লুকোজ থাকে যা শরীরে খুব দ্রুত এনার্জি এনে দেয়। এজন্য শরীর দুর্বল লাগলে বা বেশি ক্লান্ত অনুভব করলে এক গ্লাস কমলার রস পান করা ভালো।
- রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে কমলার রস। কমলার রসে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে যার ফলে ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণের সাহায্য করে। তাই যারা রক্তশূন্যতা বা অ্যালুমিনিয়ামে ভুগছেন তাদের জন্য কমলার রস উপকারী ফল হতে পারে।
- কমলা রসে পানি ও ইলেকট্রোলাইট থাকে। যা শরীরকে পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে গরমের দিনে বা শরীরে বেশি ঘামলে এটা খুব উপকারী। বা ব্যায়াম করার পরে এক গ্লাস কমলার রস খেতে পারেন।
- অনেক পানীয় শুধু পেটে পানি ভরে কিন্তু কমলা রস শরীরকে পরিষ্কার করে, রিফ্রেস করে, এনার্জি দেয় এবং ফেস অনুভূতি আনে।
- যাদের শরীরে ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা বা আর্থ্রাইটিস আছে তাদের কমলার রস খাওয়া ভালো। কমলার রস খেলে অনেক সময় শরীরের ব্যথা কমে যায়।
- যাদের আয়রন খাবার যেমন খেজুর, মাংস এবং শাকসবজি খায় তাদের জন্য কমলা রস সেই আয়রন শোষণ বাড়ায়। তাই যাদের রক্তের অভাব আছে তাদের জন্য কমলা রস খাওয়া খুবই ভালো।
কমলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে
কামলা খুবই উপকারী একটি ফল হল সবার জন্য সব অবস্থা একটু উপকারী নয়। আসলে
অতিরিক্ত কোন কিছু ভালো না। কিছু ক্ষেত্রে অতিরক্ত কমলা খাওয়া শরীরের জন্য
ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ কমলা তে থাকা পুষ্টিগুণ ও উপাদান গুলো স্বাস্থ্যের
জন্য ক্ষতির কারণও হতে পারে। তাই সব কিছুরই নিয়ম এবং পরিমাণমতন খাওয়া ভালো।
অতিরিক্ত কমলা খাওয়ার ফলে আমাদের স্বাস্থ্যের যে অপকারিতা গুলো হবে তা নিজে
দেওয়া হলো।
- পেটের সমস্যাঃ কমলাই সাইট্রিক এসিড বেশি থাকে। তাই বেশি পরিমাণে কমলা খেলে পেট ব্যথা, গ্যাস, বুক জ্বালা বা অ্যাসিডিটি হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে খালি পেটে কমলা খাওয়ার পরে পেট জ্বালা বা অস্বস্তি হতে পারে।
- দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে পারেঃ প্রাকৃতিক এসিড দাঁতের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত কমলা বা কমলা রস খেলে দাঁতের এনামেল পাতলা হয়ে যায়। যার ফলে দাঁত সেনসিটিভ, ব্যথা এবং ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই কমলা খাওয়ার পর পানি দিয়ে মুখ ফুলকুচি করে নেওয়া ভালো।
- রক্তের সুগার বাড়াতে পারেঃ কমলায় প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশি। ফল হিসাবে খেলে সমস্যা কম হলেও রস বানিয়ে খেলে ফাইবার কমে যায় এবং চিনির দ্রুত রক্তে মিশে যায় ফলে রক্তের সুগার বেড়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত।
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারেঃ কমলায় প্রচুর ফাইবার থাকে। যদি হঠাৎ করে বেশি পরিমাণ খাওয়া হয় তবে কারো কারো ক্ষেত্রে কষ্ট কাঠানো হতে পারে আবার কারো ক্ষেত্রে উল্টা ডায়রিয়া হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে এবং পরিমাণমতন খাওয়া ভালো।
- কিডনিতে স্টোন হতে পারেঃ কমলায় অক্সালেট নামক একটি উপাদান থাকে। যাদের আগে থেকে কিডনি স্টোন সমস্যা আছে। তারা বেশি কমলা খেয়ে নিলে সমস্যা আবার বেড়ে যেতে পারে।
- এলার্জি সমস্যা হতে পারেঃ অনেক মানুষ সাইট্রাস হল খেলে এলার্জি রিঅ্যাকশন অনুভব করে যেমন গলা চুলকানি, ত্বকে র্যাশ, শ্বাসকষ্ট এবং ঠোঁট ফোলা। এটা খুব সাধারণ না হল যারা এলার্জি প্রবল তাদের সাবধানে খাওয়া ভালো।
কমলার পুষ্টিগুণ ও উপাদান
কমলা খেলে ঠান্ডা অনেকটা টক মিষ্টির মতন থাকে। এজন্য প্রায় মানুষ কমলাটাকে পছন্দ
করে। তাই এর ফলটা বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তেমনি স্বাস্থ্যের দিক
দিয়ে আমাদের ফল অনেক উপকারী। আমরা যদি প্রতিদিন খাদ্যের তালিকায় একটা করে কমলা
রাখি তাহলে আমাদের শরীরে সেই পরিমাণ উপাদান গুলো পাব। প্রায় ১২০-১৫০ গ্রাম ওজনের
একটি কমলা খেলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুলো পাব। যেমন ভিটামিন সি,
পরিমাণ প্রায় ৭০ মি.গ্রা এবং দৈনিক প্রয়োজন প্রায় ৭০-৮০% পূরণ করে। ফাইবার
পরিমাণ প্রায় ৩-৪ গ্রাম। পটাশিয়াম পরিমাণ প্রায় ২৪০-২৫০মি.গ্রা। ভিটামিন এ
পরিমাণ প্রায় ৬০-৭০IU। ভিটামিন বি৯ পরিমাণ প্রায় ৩৮ মি.গ্রা। পানি প্রায়
৮৫-৮৬%। ক্যালরি প্রায় ৬০ ক্যালরি।ফ্ল্যাভোনয়েড এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট কমলার
খোসা ও রস দুটোই থাকে।
কারা কমলা খাওয়া থেকে বিরত থাকবে
কমলা যদিও সুস্বাদু ফল তবে কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের না খাওয়াই ভালো। কারণ
তাদের শারীরিক অবস্থার কারণে কমলা খাওয়া সাবধানতা থাকে পুরোপুরি এড়ানো উচিত।
কারণ কমলায় যে পুষ্টিগুণগুলো রয়েছে যাদের এ শারীরিক সমস্যাগুলো আছে তারা কমলা
খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো। আর যদিও খায় তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী
খাওয়ানো উচিত। আসুন তাহলে কারা কমলা খাওয়া থেকে বিরত থাকবে তা জেনে নিন।
- অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্টিক সমস্যা থাকা মানুষ।
- ডায়াবেটিস রোগীদের কমলা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খেলেও পরিমাণ মতো বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
- কিডনি বা ক্যালসিয়াম স্টোনের সমস্যা থাকা মানুষ।
- এলার্জির প্রবণ মানুষ।
- যাদের মাড়ি ব্যথা বা দাঁত শিরশির করে তাদের কমলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো।
কমলা খাওয়ার নিয়ম
সব কিছুর একটা নিয়ম আছে। তেমনি কমলা পুষ্টিকর ফল হল তা খাওয়ার একটা সঠিক নিয়ম
আছে বা সময়। কমলা অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল হল সঠিকভাবে খেলে তার সব উপকরণতা পাওয়া
যায় এবং কিছু সমস্যায় এড়ানো যায়। চলুন নিচে জেনে নিই কমলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
গুলো।
আরো পড়ুনঃনিয়মিত কলা খাওয়ার ১০টি উপকারিতা এবং অপকারিতা
- সকালে খালি পেটে কমলা খেলে ভিটামিন সি দ্রুত শোষিত হয় এবং শরীরকে শক্তি দেয়। আরসের সাথে শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে। বিকালে বা দুপুরে হালকা খাবারের সঙ্গে খেতে পারে যাতে এসিডিটি বা পেট জ্বালা না হয়। তবে রাতে না খাওয়াই ভালো। রাতের দিকে খালি পেটে বেশি কমলা খেলে গ্যাস বা হজমের সমস্যা হতে পারে।
- দিনে ১-২টি কমলা যথেষ্ট। বেশি খেলে পেট জ্বালা, দাঁতের সমস্যা বা রক্তে চিনির মাত্রা বাড়াতে পারে।
- যদি আপনি কমলার রস করে খেতে চান তাহলে চেষ্টা করবেন ফ্রেশ এবং চিনি না মিশিয়ে খাওয়া। বাজারে প্যাকেটজাত রসের চিনি বেশি থাকে। যা আপনার ডায়াবেটিস বা ওজন বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর। খাওয়ার পর মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন না হলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- কমলা খাওয়ার পরে একটু পানি খেলে এসিড কমে এবং হজম ভালো থাকে। কিন্তু কমলার সাথে দুধ একসাথে খাওয়া এড়ানো উচিত কারণ এতে হজমের সমস্যা হতে পারে।
FAQ: প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ কমলালেবু খাওয়া মানবদেহের জন্য কতটা উপকারী?
উত্তরঃ কমলালেবু মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ এটি ভিটামিন সি ফাইবার ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। কমলালেবু মানব দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে ভালো রাখে।
প্রশ্নঃ কমলালেবু কোন জেলায় বা কোন দেশে প্রথম হয়েছে?
উত্তরঃ কমলালেবু মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভারত ও মিয়ানমার অঞ্চলে প্রথম পাওয়া
যায়। পরে এটি মধ্যপ্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরের দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রশ্নঃ কমলালেবু গর্ভবতী ও শিশুদের জন্য কতটা উপকারী?
উত্তরঃ কমলা গর্ভবতীর জন্য এটির শরীরের লোহা শোষণের সহজ করে এবং স্বাস্থ্য বজায়
রাখতে সাহায্য করে। শিশুদের জন্য এটি আরও দাঁতের বিকাশকে সমর্থন করে এবং চোখের
স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
শেষ কথা কমলা খাওয়ার ১৩টি উপকারিতা এবং অপকারিতা
কমলা খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের যে উপকার হবে তা জানলাম। কমলা খাওয়ার ১৩টি
উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে। আর সেই সাথে কি পরিমাণ খেলে বা কারা খেতে পারবে
না তা আলোচনা করেছি। কমলা আমাদের জন্য একটা সুপার ফুড হিসাবে কাজ করে। তবে
কমলা ফলের পাশাপাশি আমরা যদি আরো অন্য সব ফলগুলো রাখতে পারি খাদ্যের তালিকায়
তাহলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শরীরের যে ঘাটতি হয় তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
থাকবে। সে সাথে আমাদের স্বাস্থ্য ও শরীর ও মন ভালো থাকবে এবং কাজে মন
বসবে।
এই আর্টিকেলে কমলা খাবার উপকারিতা এবং অপকারিতা আর সেই সাথে নিয়ম সব গুলো নিয়ে
আলোচনা করেছি। তাই আসুন আমরা সকলে স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর
খাবার, শাক সবজি, নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর ফল বেশি বেশি করে
খাব। এবং স্বাস্থ্য ও মনকে ভালো রাখবো যাতে করে সব কাজেই এনার্জি পাওয়া যায়।
আর্টিকেল পড়ে আপনার যদি উপকারে আসে তাহলে আপনার বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করুন
এবং আপনার মতামতটি কমেন্ট বক্সে জানান ধন্যবাদ।

সামিজা৪২ কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url